ভূমিকা

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ফসল উৎপাদনের উপর যে বিশেষভাবে নির্ভরশীল- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পর্যাপ্ত ধান, পাট, গম, ডাল, তৈলবীজ, ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদনের উপর নির্ভর করছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, দেশের অর্থনৈতিক অস্তিত্ব এবং গোটা জাতির ভাগ্য। এ দেশের মাটি উৎপাদনের অনুকূলে থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ফসলের ফলন কম। ফলনের এই কম উৎপাদনশীলতার বিভিন্ন কারনের মধ্যে রোগবালাই এর ভূমিকা অন্যতম। রোগ হলে ফসলের স্বাস্থ্যহানী ঘটে, ফসল মারা যায়, যার ফলে উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। ফসলের রোগ সাধারনত অতিক্ষুদ্র ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, নেমাটোড বা কৃমি প্রভৃতি দ্বারা হয়। যাদেরকে অনুবিক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায়না।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ফসল বিভিন্ন রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমান ফসল শুধুমাত্র রোগের কারনেই নষ্ট হয়। সুনির্দিষ্ট বলতে গেলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ ভাগ ফসল রোগের কারনেই নষ্ট হয়। দিন দিন আমাদের ফসলগুলোতে রোগের আক্রমন বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তথা এশিয়াতে প্রথম গমের ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ আমাদেরকে অবাক ও সংকিত করেছে। সেজন্য ফসলের রোগবালাই ও তার দমন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রযুক্তি সম্প্রসারনকে আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে এবং যুগোপযোগী করতে হবে। সঠিক বালাইনাশক ব্যবহার, উপযুক্ত সময় ও সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ না করার কারনে রোগবালাই দমন হয়না। বরং তা পরিবেশ দূষণসহ মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট করে এবং জলাধারের পানি দূষিত করে। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করলে বালাই এর সহ্যক্ষমতা বেড়ে যায় বিধায় ঐ বালাইনাশকে আর কাজ হয়না। তখন তুলনামূলকভাবে অধিক বিষাক্ত ও অধিক মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ফলে একদিকে ফসলের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে পরিবেশ ও আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।

তাই ফসলের রোগবালাই দমনের জন্য আমাদের অবশ্যয় পরিবেশবান্ধব উপায়গুলোর কথা আগে বিবেচনা করতে হবে। রোগ দমনের জন্য সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনার উপর গবেষণা বাড়াতে হবে এবং কৃষকের কাছে এ ধরনের হালনাগাদ প্রযুক্তিসমূহ সহজলভ্য করতে হবে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গড়ে তোলা এ ওয়েবসাইটটি কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষির সাথে জড়িত সকলের কাজে লাগবে আশা করি। এটি তৈরিতে জড়িত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।